অননাইল কেনাকাটা এখন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তবে তার পেমেন্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকাশ, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং দিয়েই করা হয়। এর মূল কারণ কার্ড না থাকা বা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে না পারা। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয় তার সম্পূর্ণ নিয়ম কানুন। তো চলুন শুরু করা যাক।
কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার নিয়ম
এই নিয়মে আপনি VISA, Mastercard, American Express ইত্যাদি কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। সব কার্ডের ক্ষেত্রে নিয়ম একই রকমের। যেখানে পেমেন্ট দিবেন তার পেমেন্ট গেটওয়েতে যান। এরপর নিচের মতো তথ্যগুলো দিন ও পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
Enter Card Number: এই কার্ডের উপরের অংশের ১৬ ডিজিটের কার্ড নম্বরটি এই ঘরে লিখুন।
MM/YY: এই ঘরে আপনার কার্ডের Expiry Date বা মেয়াদ উত্তীর্ণের মাস ও সাল লিখতে হবে। এটি কার্ডের উপরের অংশে কার্ড নম্বরের নিচের অংশে লেখা থাকে। সেখান থেকে দেখে MM এর জায়গায় মাসের সংখ্যা লিখুন। যেমনঃ জানুয়ারি হলে 01 লিখুন। এটি কার্ডেই লেখা থাকে। আর YY এর জায়গায় সাল লিখুন। যেমন 2032 সাল হলে সালের শেষ দুই ডিজিট অর্থাৎ 32 লিখুন। কোন কোন জায়গায় YYYY লেখা থাকে। সেখানে ৪ ডিজিটের পুরা সালটাই লিখতে হবে।
CVC/CVV: এই ঘরে কার্ডের CVV কোড বা গোপন কোডটি দিতে হবে। এটি কার্ডের পিছনের অংশে ৩ ডিজিটের একটি সংখ্যা। যেমনঃ 256।
Card Holder Name: এখানে কার্ডের মালিকের নাম লিখতে হবে। তবে যেকোন নাম দিলেই হবেনা। কার্ডের উপরের অংশে Expiry Date এর নিচে কার্ড হোল্ডারের নাম লেখা থাকে। সেই নামটি এই ঘরে লিখতে হবে।
সব ঘর সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে Pay/Pay now বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। তবে কোন কোন পেমেন্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা হিসেবে আপনার কাছে OTP চাওয়া হবে। এক্ষেত্রে Pay বাটনে ক্লিক করার পর আপনার কার্ড নেওয়ার সময় যেই ফোন নম্বর ও যে ইমেইল এড্রেস দিয়েছেন সেগুলো দেখতে পাবেন। যেটাতে OTP পেতে চান সেটা সিলেক্ট করে Submit বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইল কিংবা ইমেইলে আপনার ব্যাংক/কার্ড প্রোভাইডার থেকে একটি OTP আসবে। এইটি দিয়ে সাবমিট দিলেই পেমেন্ট সম্পন্ন হবে।
আমি কি USD বা ডলারে পেমেন্ট করতে পারবো?
আপনার কার্ডটি যদি ডুয়েল কারেন্সি সাপোর্টেড কার্ড হয় তবে আপনি ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই পাসপোর্ট দিয়ে Endorse করা থাকতে হবে। কিভাবে ডলার এনডোর্স করবেন সে ব্যাপারে আপনার ব্যাংক আপনাকে সহায়তা করতে পারবে।
উপরের সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও অনেকে ডলারে পেমেন্ট করতে পারেন না। এর মূল কারণ হলো অনেক ব্যাংক নিরাপত্তার স্বার্থে ডলার পার্টের পেমেন্ট সাধারনট বন্ধ রাখেন। একে কার্ড লকও বলে। এক্ষেত্রে পেমেন্ট করতে হলে আগে ব্যাংকে কল করে বা ইমেইল করে সেটি চালু করে তারপর পেমেন্ট দিতে হবে।
কার্ডে পেমেন্টের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে?
কার্ডে পেমেন্ট করার সময় নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা উচিত। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা নির্দেশনা দেওয়া হল:
১. কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখা
- কার্ড নম্বর, CVV এবং পিন: এই তথ্যগুলো কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
- অনলাইন লেনদেনের সময়: কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে SSL এনক্রিপ্টেড ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। URL-এ “https://” চিহ্নিত ওয়েবসাইটগুলোতে লেনদেন করুন। SSL নেই এমন সাইটে কখনোই লেনদেন করবেন না। এতে আপনার কার্ডের তথ্য চুরি হতে পারে।
২. কার্ড লক এবং সতর্কতা সেবা ব্যবহার
- ব্লকিং সেবা: অনেক ব্যাংক বা কার্ড প্রদানকারী সংস্থা কার্ড লক বা ফ্রিজ সেবা প্রদান করে, যা আপনি প্রয়োজন অনুসারে চালু বা বন্ধ করতে পারেন।
- সতর্কতা সেবা: আপনার ব্যাংক বা কার্ড প্রদানকারী সংস্থার সতর্কতা সেবা চালু রাখুন, যাতে প্রতিটি লেনদেনের সময় আপনাকে SMS বা ইমেল মাধ্যমে সতর্কতা পাঠানো হয়।
৩. নিয়মিত স্টেটমেন্ট পরীক্ষা
- লেনদেন পর্যালোচনা: আপনার কার্ডের স্টেটমেন্ট নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং যে কোনো অস্বাভাবিক বা অচেনা লেনদেন দ্রুত রিপোর্ট করুন।
৪. ফিশিং ও স্কিমিং থেকে সুরক্ষিত থাকা
- ফিশিং: আপনার ইমেল বা মেসেজে আসা কোনো লিঙ্কে ক্লিক করে কার্ডের তথ্য প্রদান করবেন না। যদি আপনার সন্দেহ হয়, তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যান।
- স্কিমিং: পেমেন্ট করার সময় কার্ডটি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করুন এবং সন্দেহজনক কোন ডিভাইস দেখতে পেলে তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করুন।
৫. ভ্রমণের সময় সতর্কতা
- সীমা সেট করা: আপনার ব্যাংক বা কার্ড প্রদানকারী সংস্থাকে জানিয়ে রাখুন যাতে বিদেশ ভ্রমণের সময় তারা অতিরিক্ত সতর্ক থাকে।
- মাল্টিপল কার্ড ব্যবহার: একাধিক কার্ড বহন করুন, যেন একটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে অন্যটি ব্যবহার করতে পারেন।
৬. অন্যান্য নিরাপত্তা পরামর্শ
- EMV চিপ কার্ড: চিপ কার্ড ব্যবহার করুন কারণ এতে নিরাপত্তা বেশি থাকে।
- দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ (2FA): দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ চালু রাখুন, যাতে প্রতিটি লেনদেনের জন্য OTP বা অন্য কোনো প্রমাণীকরণ প্রয়োজন হয়।
এই সতর্কতা মেনে চললে আপনি কার্ড পেমেন্টের সময় নিরাপদ থাকতে পারবেন এবং সম্ভাব্য জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাবেন।
আরো পড়নঃ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম, সুবিধা ও অসুবিধা
শেষ কথা
খুব সহজভাবে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করার নিয়মকানুন সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করলাম। কোন বিষয়ে বুঝতে সমস্যা সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় নিচে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।