গ্রামীণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি ২০২৪ | Grameen Bank Loan

গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank) বাংলাদেশের অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি ব্যাংক। এটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বের প্রথম এবং বৃহত্তম ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। গ্রামীণ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদান করা এবং তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি করা।

তাদের কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ক্ষুদ্রঋণ, সঞ্চয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মত সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম সফল উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ প্রদানের পদ্ধতিটিকে “গ্রামীণ ব্যাংক মডেল” বলা হয়। এবং এই মডেলটি বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে অনুসরণ করা হয়েছে। যাই হোক, এবারের আর্টিকেলে আমরা জানার চেষ্টা করবো “গ্রামীণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি” সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

Grameen Bank Loan System | গ্রামীণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি
Grameen Bank Loan

কেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেয়া উচিত?  

শুরুতেই জেনে নেয়া উচিৎ লোন নেয়ার জন্য কেন গ্রামীণ ব্যাংকেই বেছে নেয়া উচিৎ হবে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার কিছু সুবিধা উপস্থাপন করছি।  

১) সবচেয়ে হাইলাইটেড যে সুবিধাটি রয়েছে তা হলো, আপনি যদি ছাত্র অবস্থায় কোনো ঋণ গ্রহন করেন তবে আপনি যতদিন পড়াশোনা করছেন বা শিক্ষার্থী হয়ে রয়েছেন ততদিন অব্দি ঋণ পরিশোধ করতে হবে না।

২) আপনি প্রতি মাসে একটি নিদিষ্ট এমাউন্ট করে মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।  

৩) যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রদানকৃত ঋণের পরিমান কম (ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে ৫০,০০০) তাই কম সময়ের মধ্যেই দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে ফেলা যায়।  

৪) ক্ষুদ্র ও কৃষি লোনের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক হারে ঋণ পরিশোধের সুবিধা।  

৫) অধিক সেক্টর ও কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে মুনাফার হার বেশি কম হয়। তাই যারা একটু বেশি অসচ্ছল তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলক কম থাকে।  

৬) খুব সহজ পদ্ধতিতে এবং দ্রুত ঋণ পাওয়া যায়।  

আরো পড়ুনঃ অন্যান্য ব্যাংকের লোন সম্পর্কে জানুন এখানে

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কত ধরণের লোন নেয়া যায়?

এই পর্যায়ে জানাবো ঠিক কত প্রকার লোন বা ঋণ নেয়া যাবে গ্রামীন ব্যাংক থেকে। নিম্মে একেক করে ঋণের ক্যাটাগরি ও সে সম্পর্কে ব্যাসিক কিছু তথ্য প্রদান করা হলো।

ক্ষুদ্র ঋণ

গ্রামীণ ব্যাংক যে ঋণের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেটিই হলো ক্ষুদ্র ঋণ। খুব সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়ায় এই ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক (কৃষক থেকে শুরু করে যেকোনো নারী) এই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহন করতে পারে।  

তবে এখানে অবশ্যই কিছু শর্ত মোতাবেক চলতে হয়। মূলত গ্রাহককে একটি ক্ষুদ্র দল তৈরি করতে হয়, এবং প্রতি দলে অন্তত্যপক্ষে ৫ জন সদস্য হতে হবে। এখানের যদি কেউ কৃষক কিংবা ভূমিহীন হয় তবুও তাকে ঋণ প্রদান করা হয় জামিনদারের উপর ভরসা করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে একজন এজেন্ট এসে আপনার কাছ থেকে ঋণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে যাবে।

ঋণ নেয়ার প্রসেসও খুব সহজ। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকা আপনার নিকটবর্তী গ্রামীন ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করার মাধ্যমে সহজেই সেখান থেকে ঋণ গ্রহন করা যাবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা অব্দি ঋণ পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক?

কৃষি ঋণ

কৃষক সমাজকে উন্নত করে এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই কৃষকদের বিভিন্ন কজের জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে। একজন কৃষক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কৃষি ঋণ গ্রহন করতে পারে। সেগুলো হলো:

  • জমি ক্রয় বা বর্গা নেওয়া
  • কৃষি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়
  • বীজ, সার ও কীটনাশক ক্রয়
  • মৎস্য চাষ, পশুপালন ও অন্যান্য কৃষি-ভিত্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগ
  • কৃষি উৎপাদন ও বিপণন
লোন পেয়ে সোনার ফসল ফলাচ্ছে কৃষক ছবিঃ ভোরের কাগজ
কৃষকের মুখে হাসি

কৃষি ঋণের জন্য সুদের হার খুবই কম। মাত্র ৬% সুদের হার, এবং এটি দীর্ঘ মেয়াদী যা সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য হতে পারে। ঋণটি পেতে হলে কৃষকের নিজস্ব জমি, কৃষি কাজে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

পশুসম্পদ ঋণ

গ্রামীণ এলাকার কৃষকদেরকে তাদের পশুসম্পদ ক্রয়, উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য যে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পশুসম্পদ ঋণ নেয়া সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে ঋন নিয়ে আপনি নিম্ম লিখিত পশু পালন করতে পারবেন:

  • গরু
  • মহিষ
  • ছাগল
  • ভেড়া
  • হাঁস-মুরগি
  • মাছ

ঋণ গ্রহনের জন্য আপনাকে অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। পশুপালনে অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ত স্থান থাকতে হবে।

উদ্যোক্তা ঋণ

উদ্যোক্তাদেরকে ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু বা সম্প্রসারণ করার জন্য গ্রামীন ব্যাংক উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে থাকে। উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কাজের জন্য যেমন:

  • পণ্য ও সেবা ক্রয়
  • অফিস ও কারখানা নির্মাণ বা ভাড়া
  • যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়
  • কর্মচারী নিয়োগ
  • বিপণন ও প্রচার
  • অন্যান্য খরচ
গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোক্তা ঋণ
গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোক্তা ঋণ

এর জন্য এই ঋণ গ্রহন করতে পারবে। সুদের হার ৬% হবে এবং সর্বোচ্চ ২ বছর অব্দি মেয়াদ থাকবে। তবে বিভিন্ন কন্ডিশন অনুযায়ী এই মেয়াদ কিছুটা বাড়ানো যাবে। এই ঋণটি পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ১৮ বছর বয়সের হতে হবে। তাছাড়া তার ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা ব্যাংক কতৃপক্ষের কাছে বিবরণ করতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হিসেবে ব্যাসিক কাগজপত্রের পাশাপাশি আয়কর সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। এবং এসবের মাধ্যমেই খুব দ্রুত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তা ঋন পাওয়া যাবে।

 হাউজিং লোন  

মাথার উপর আশ্রয়, পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পরোনে বস্ত্র মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি চাহিদা। সেই ধারণাকে কেন্দ্র করেই গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৪ সালে একটি হাউজিং লোন প্রোগ্রাম চালু করে। বাড়ি হলো একটি মানুষকে গর্ব, নিরাপত্তার প্রতীক। যাই হোক একটি সাধারণ টিনের ছাদের ঘর নির্মাণের জন্য হাউজিং লোনের সর্বোচ্চ ৬০,০০০ টাকা দিয়ে থাকে। ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং হাউজিং লোন এর পরিশোধের ব্যবস্থা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে।

আরো পড়ুনঃ আশা এনজিও লোন পদ্ধতি | ASA NGO loan

শিক্ষা ঋণ

আপনি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন এবং আপনার শিক্ষা খাতে অর্থের প্রয়োজন, এক্ষেত্রে রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষা ঋণের সুবিধা। এক্ষেত্রে যে সকল সেক্টরের শিক্ষার্থীদের ঋণ দেয়া হয় তারা হলো:

  • মেডিক্যাল এর স্টুডেন্ট
  • ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট
  • পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • MA / MS / MBA এর স্টুডেন্ট
  • গ্রামীণ ব্যাংক কতৃক অন্তর্ভুক্ত ১৭ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
শিক্ষা লোন | Student Loan
শিক্ষা লোন

শিক্ষা লোন পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ২০ থেকে ২৫ বছর। এক্ষেত্রে ছাত্র থাকা অবস্থায় এই ঋণ পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা নেই।  

গ্রামীণ ব্যাংক লোনের শর্ত ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য গ্রাহককে অবশ্যই কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। শর্ত গুলো হলো:

  • ১) শিক্ষা লোন বাদে অন্যান্য লোনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে।
  • ২) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
  • ৩) যে আবেদন করবে তার নিজস্ব ঘরবাড়ি থাকতে হবে।
  • ৪) প্রথমবার বা প্রাথমিক ভাবে লোন সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পাবে।
  • ৫) ঋণের ৫% সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রদান করতে হবে।
  • ৬) নমিনির তথ্য (যেমন: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি) দিতে হবে।
  • ৭) সত্যায়িত চারিত্রিক সনদপত্র জমা দিতে হবে।  

গ্রামীণ ব্যাংক লোন নেয়ার পদ্ধতি

ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পদ্ধতি সহজ। এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংকে উপস্থিত হতে হবে। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা রয়েছে দেশের প্রতিটা ইউনিয়ন পর্যায়ে। আপনাকে সেখানে যেতে হবে এবং আপনি যদি গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে থাকেন তবে ঋণের জন্য ফরম পূরণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হবে সেখানে থাকা কর্মরত লোকদের জানানো যে আপনি ঋণ গ্রহন করতে আগ্রহী।

উপরে উল্লেখিত ক্যাটাগরির মধ্যে আপনি যে ক্যাটাগরিতে ঋণ গ্রহন করতে চান সেটা তাদের অবগত করলে সে বিষয়ক একটি ফরম দিবে। উক্ত ফরম পূরণের পাশাপাশি সে ঋণে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ ও ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।

সব ঠিক ঠাক ভাবে হলে আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার Loan Approve হয়ে যাবে

গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ

ঠিকানা: Head Office Mirpur-2, Dhaka-1216 Bangladesh

ফোন: +88 02 58055628, +88 02 58055652  

ইমেইল: [email protected]; [email protected]

পরিশেষে কিছু কথা  

এই ছিলো গ্রামীণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেখানে ঋণের প্রকারভেদ থেকে শুরু করে সকল ধরণের প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাম বাংলার ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মানুষের ব্যাংক। আশা করি এবারের আর্টিকেলের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের লোন সেবা সম্পর্কে জানাতে সক্ষম হয়েছি। এতোক্ষম অব্দি ধৈধ্য সহকারে যুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *