আধুনিক ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং লেনদেন অনেক সহজ ও দ্রুততর হয়ে উঠেছে। এখন আর ব্যাংকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাঠাতে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক মিলে বেশ কিছু আধুনিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে, যা মানুষের আর্থিক লেনদেনকে নিরাপদ, দ্রুত এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের চারটি প্রধান ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। এগুলো হলো RTGS (Real Time Gross Settlement), NPSB (National Payment Switch Bangladesh), NEFT (National Electronic Fund Transfer), এবং BEFTN (Bangladesh Electronic Fund Transfer Network)।
অনেকেই এই চারটি সিস্টেমের নাম শুনেছেন, কিন্তু ঠিক কোনটি কখন ব্যবহার করতে হয় এবং কোনটির সুবিধা কী, তা নিয়ে দ্বিধা থেকে যায়। প্রতিটি সিস্টেমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের জন্য বিভিন্ন সিস্টেম উপযুক্ত। এই আর্টিকেল পড়ার পর আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন যে কোন পরিস্থিতিতে কোন সিস্টেম ব্যবহার করা আপনার জন্য সবচেয়ে লাভজনক এবং সুবিধাজনক হবে।
RTGS (Real Time Gross Settlement) কী?
সংজ্ঞা এবং পূর্ণরূপ
RTGS-এর পূর্ণরূপ হলো Real Time Gross Settlement, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘তাৎক্ষণিক মোট নিষ্পত্তি পদ্ধতি’। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম যা দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানান্তর করার সুবিধা দেয়। RTGS সিস্টেম বাংলাদেশে ২০১৫ সালে চালু হয়েছিল এবং তখন থেকে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
RTGS সিস্টেমের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি রিয়েল টাইমে কাজ করে। এর মানে হলো যখনই আপনি RTGS-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন, সেই মুহূর্তেই টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। এখানে কোনো দেরি হয় না এবং লেনদেনটি সম্পূর্ণ হতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। এই সিস্টেমটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে উচ্চ মূল্যের লেনদেনের জন্য, যেখানে দ্রুততা এবং নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
RTGS কীভাবে কাজ করে?
RTGS সিস্টেমের কার্যপ্রণালী বেশ সরল কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর। যখন আপনি আপনার ব্যাংকে গিয়ে বা অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে RTGS করার অনুরোধ করেন, তখন আপনার ব্যাংক সেই লেনদেনের তথ্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের RTGS সিস্টেমে পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে এবং প্রতিটি লেনদেন আলাদাভাবে প্রসেস করে।
প্রথমে সিস্টেম যাচাই করে যে আপনার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা। যদি টাকা থাকে, তাহলে সাথে সাথে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সেই পরিমাণ টাকা ডেবিট হয়ে যায় এবং প্রাপকের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রাপকের ব্যাংক তখন সেই টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট করে দেয়। পুরো প্রক্রিয়াটি রিয়েল টাইমে ঘটে, অর্থাৎ কোনো ব্যাচ প্রসেসিং নেই এবং প্রতিটি লেনদেন আলাদাভাবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি হয়।
RTGS-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি “গ্রস সেটেলমেন্ট” পদ্ধতি অনুসরণ করে। এর অর্থ হলো প্রতিটি লেনদেন আলাদাভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। অন্যান্য কিছু সিস্টেমে একসাথে অনেকগুলো লেনদেন একত্রিত করে নেট করা হয় এবং তারপর নিষ্পত্তি করা হয়, কিন্তু RTGS-এ প্রতিটি লেনদেন স্বতন্ত্র এবং সম্পূর্ণ।
RTGS-এর লেনদেন সীমা
RTGS সিস্টেম ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম লেনদেন সীমা রয়েছে। বাংলাদেশে RTGS-এর মাধ্যমে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা পাঠাতে হয়। এর নিচের পরিমাণের জন্য RTGS ব্যবহার করা যায় না। এই সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কারণ RTGS মূলত বড় অঙ্কের লেনদেনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, RTGS-এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ কত টাকা পাঠানো যায় তার কোনো নির্দিষ্ট উর্ধ্বসীমা নেই। আপনি চাইলে কয়েক কোটি বা তারও বেশি টাকা একবারে পাঠাতে পারবেন। এটি RTGS-এর একটি বড় সুবিধা, বিশেষ করে ব্যবসায়িক লেনদেন বা বড় পেমেন্টের ক্ষেত্রে। তবে মনে রাখতে হবে যে আপনার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক অতিরিক্ত যাচাইকরণের জন্য অনুরোধ করতে পারে।
RTGS-এর কার্যকরী সময়
RTGS সিস্টেম সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিনে এবং নির্দিষ্ট সময়ে চালু থাকে। বাংলাদেশে RTGS সাধারণত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চালু থাকে। সরকারি ছুটির দিনে এই সিস্টেম বন্ধ থাকে। তাই আপনি যদি RTGS-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চান, তাহলে অবশ্যই এই সময়সীমার মধ্যে লেনদেনটি শুরু করতে হবে।
এই সময়সীমার মধ্যে যদি আপনি RTGS করেন, তাহলে মাত্র ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়। কিন্তু যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের বাইরে RTGS করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই লেনদেনটি পরবর্তী কার্যদিবসে প্রসেস হবে। এজন্য জরুরি লেনদেনের ক্ষেত্রে সময়সীমা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
RTGS কখন ব্যবহার করবেন?
RTGS সিস্টেম বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা সবচেয়ে উপযুক্ত। যদি আপনার এক লাখ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের টাকা দ্রুত পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে RTGS আপনার জন্য সেরা অপশন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য বড় অঙ্কের টাকা পাঠাতে চান, তাহলে RTGS ব্যবহার করা উচিত।
ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রেও RTGS অত্যন্ত জনপ্রিয়। যেমন কোনো কোম্পানি যদি তাদের সাপ্লায়ারকে বড় অঙ্কের পেমেন্ট করতে চায়, বা কোনো কন্ট্রাক্টরকে টাকা পাঠাতে চায়, তাহলে RTGS ব্যবহার করলে দ্রুত এবং নিরাপদে টাকা পৌঁছায়। এছাড়া ব্যাংক লোনের কিস্তি পরিশোধ, সিকিউরিটিজ কেনাবেচা, বা বড় ধরনের ইনভেস্টমেন্টের জন্যও RTGS একটি আদর্শ মাধ্যম।
জরুরি পরিস্থিতিতে যখন দ্রুত টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তখনও RTGS ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন যে RTGS-এর জন্য একটি সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হয়, যা অন্যান্য সিস্টেমের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে। তাই ছোট অঙ্কের লেনদেনের জন্য RTGS ব্যবহার করা খরচ-সাপেক্ষ হতে পারে।
NEFT (National Electronic Fund Transfer) কী?
সংজ্ঞা এবং পূর্ণরূপ
NEFT-এর পূর্ণরূপ হলো National Electronic Fund Transfer, অর্থাৎ জাতীয় ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা। এটি মূলত ভারতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি পেমেন্ট সিস্টেম। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে NEFT শব্দটি কম প্রচলিত, কারণ এখানে BEFTN এবং RTGS-ই প্রধানত ব্যবহৃত হয়। তবে NEFT-এর ধারণা এবং কার্যপ্রণালী বুঝে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি BEFTN-এর সাথে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পরিভাষায় এই শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
NEFT একটি ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম যা নির্দিষ্ট সময় পরপর লেনদেন নিষ্পত্তি করে। এটি RTGS-এর মতো তাৎক্ষণিক নয়, বরং একটি সময়সূচী অনুসরণ করে চলে। NEFT সিস্টেমের মাধ্যমে ছোট থেকে মাঝারি পরিমাণের টাকা নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে স্থানান্তর করা যায়।
NEFT কীভাবে কাজ করে?
NEFT সিস্টেম কাজ করে ব্যাচ সেটেলমেন্ট পদ্ধতিতে। এখানে দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যক “ব্যাচ” থাকে এবং প্রতিটি ব্যাচে একসাথে অনেকগুলো লেনদেন প্রসেস করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি দিনে ১২টি ব্যাচ থাকে, তাহলে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর একটি ব্যাচ প্রসেস হবে। আপনার লেনদেনটি পরবর্তী ব্যাচে যুক্ত হবে এবং সেই ব্যাচ প্রসেস হওয়ার পর টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছাবে।
ধরুন আপনি সকাল ১০টায় NEFT-এর মাধ্যমে টাকা পাঠালেন। যদি পরবর্তী ব্যাচ দুপুর ১২টায় প্রসেস হয়, তাহলে দুপুর ১২টার কিছু পরেই টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এইভাবে NEFT সিস্টেম সারাদিন ধরে নির্দিষ্ট সময় পরপর লেনদেন নিষ্পত্তি করতে থাকে। এই পদ্ধতি RTGS-এর তুলনায় কিছুটা ধীর, কিন্তু অনেক বেশি খরচ-কার্যকর এবং ছোট লেনদেনের জন্য বেশি উপযুক্ত।
NEFT-এর লেনদেন সীমা
NEFT সিস্টেমে সাধারণত কোনো ন্যূনতম লেনদেন সীমা থাকে না। আপনি মাত্র কয়েকশো টাকাও NEFT-এর মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন। এটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য খুবই সুবিধাজনক। ভারতে NEFT-এর ক্ষেত্রে কোনো ন্যূনতম সীমা নেই, তবে প্রতিটি দেশে এই নীতি ভিন্ন হতে পারে।
সর্বোচ্চ লেনদেন সীমার ক্ষেত্রে, NEFT-এর মাধ্যমে সাধারণত বড় অঙ্কের টাকাও পাঠানো যায়, তবে এটি RTGS-এর মতো আনলিমিটেড নয়। অনেক ব্যাংক NEFT-এর জন্য একটি দৈনিক বা লেনদেন প্রতি উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে রাখে, যা সাধারণত কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ব্যক্তিগত এবং মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য এই সীমা যথেষ্ট।
NEFT-এর কার্যকরী সময়
NEFT সিস্টেম সাধারণত সারা সপ্তাহ ধরে চালু থাকে, তবে এর কার্যকরী ঘণ্টা নির্দিষ্ট। কিছু দেশে NEFT ২৪/৭ পরিষেবা দেয়, আবার কিছু দেশে এটি শুধুমাত্র ব্যাংকের কার্যকরী সময়ে চালু থাকে। ভারতে NEFT সিস্টেম এখন প্রায় সারাদিন এবং সারা সপ্তাহ চালু থাকে, যা গ্রাহকদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক।
যেহেতু NEFT ব্যাচ প্রসেসিং করে, তাই লেনদেনটি সম্পন্ন হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। সাধারণত একই দিনে টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে চলে যায়, তবে কখনো কখনো পরবর্তী কার্যদিবসে পৌঁছাতে পারে, বিশেষ করে যদি লেনদেনটি দিনের শেষের দিকে করা হয়।
NEFT কখন ব্যবহার করবেন?
NEFT সিস্টেম মাঝারি পরিমাণের লেনদেনের জন্য আদর্শ। যদি আপনার কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয় এবং তাৎক্ষণিকতা খুব জরুরি না হয়, তাহলে NEFT একটি ভালো বিকল্প। এটি RTGS-এর তুলনায় কম খরচবহুল এবং ছোট লেনদেনের জন্য আরো উপযুক্ত।
নিয়মিত বিল পরিশোধ, যেমন ইউটিলিটি বিল, স্কুলের বেতন, বা ইএমআই পেমেন্টের জন্য NEFT একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছে টাকা পাঠানোর জন্যও NEFT ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ছোট সাপ্লায়ার পেমেন্ট, কর্মচারীদের বেতন, বা অন্যান্য নিয়মিত খরচের জন্য NEFT ব্যবহার করা যায়।
তবে মনে রাখা দরকার যে বাংলাদেশে NEFT শব্দটি সরাসরি ব্যবহৃত হয় না। এর পরিবর্তে BEFTN সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা NEFT-এর মতোই কাজ করে এবং একই ধরনের উদ্দেশ্য পূরণ করে।
BEFTN (Bangladesh Electronic Fund Transfer Network) কী?
সংজ্ঞা এবং পূর্ণরূপ
BEFTN-এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh Electronic Fund Transfer Network, যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর নেটওয়ার্ক’। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি জাতীয় পেমেন্ট সিস্টেম যা ২০১১ সালে চালু হয়েছিল। BEFTN বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেম।
BEFTN মূলত সাধারণ মানুষ এবং ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে অন্য যে কোনো ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংক এবং অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান BEFTN নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত, যা এই সিস্টেমকে অত্যন্ত কার্যকর এবং সহজলভ্য করে তুলেছে।
BEFTN কীভাবে কাজ করে?
BEFTN একটি ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম, যা দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যাচে লেনদেন নিষ্পত্তি করে। বর্তমানে BEFTN-এ দিনে তিনটি প্রধান ব্যাচ রয়েছে। সকাল, দুপুর এবং বিকালে এই ব্যাচগুলো প্রসেস হয়। প্রতিটি ব্যাচে সেই সময়ের আগে করা সমস্ত লেনদেন একসাথে প্রসেস করা হয়।
ধরুন আপনি সকাল ১০টায় BEFTN-এর মাধ্যমে টাকা পাঠালেন। আপনার ব্যাংক সেই লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের BEFTN সিস্টেমে পাঠাবে। এরপর দুপুরের ব্যাচে যখন সমস্ত লেনদেন একসাথে প্রসেস হবে, তখন আপনার টাকা প্রাপকের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রাপকের ব্যাংক সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট করে দেবে। সাধারণত একই দিনে বা পরবর্তী কার্যদিবসে টাকা প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়।
BEFTN সিস্টেমের একটি বড় সুবিধা হলো এটি একসাথে হাজার হাজার লেনদেন দক্ষভাবে প্রসেস করতে পারে। এই কারণে এটি বেতন বিতরণ, পেনশন পেমেন্ট, সরকারি ভর্তুকি বিতরণ এবং অন্যান্য বাল্ক পেমেন্টের জন্য খুবই উপযুক্ত। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের বেতন BEFTN-এর মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে।
BEFTN-এর লেনদেন সীমা
BEFTN-এর ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম লেনদেন সীমা নেই। আপনি মাত্র কয়েকশো টাকাও BEFTN-এর মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন। এটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য খুবই সুবিধাজনক। ছোট দোকানদার থেকে শুরু করে বড় কোম্পানি পর্যন্ত সবাই BEFTN ব্যবহার করতে পারে।
সর্বোচ্চ লেনদেন সীমার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী BEFTN-এর মাধ্যমে লেনদেন প্রতি সাধারণত পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠানো যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সীমা ভিন্ন হতে পারে এবং ব্যাংক বা লেনদেনের ধরনের উপর নির্ভর করতে পারে। এই সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে মূলত নিরাপত্তার কারণে এবং ছোট-মাঝারি লেনদেনকে উৎসাহিত করার জন্য।
তবে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে এই সীমা পরিবর্তন করতে পারে এবং বিভিন্ন ব্যাংক তাদের নিজস্ব সীমা নির্ধারণ করতে পারে। তাই BEFTN ব্যবহারের আগে আপনার ব্যাংকের সাথে লেনদেন সীমা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত।
BEFTN-এর কার্যকরী সময়
BEFTN সিস্টেম সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন চালু থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত শুক্রবার এবং শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে, তাই এই দুই দিন BEFTN লেনদেন প্রসেস হয় না। তবে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত BEFTN সিস্টেম সক্রিয় থাকে এবং নিয়মিত ব্যাচ প্রসেসিং চলে।
বর্তমানে BEFTN দিনে তিনটি প্রধান ব্যাচে লেনদেন নিষ্পত্তি করে। এই ব্যাচগুলো সাধারণত সকাল, দুপুর এবং বিকালে প্রসেস হয়। প্রতিটি ব্যাচের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাট-অফ টাইম থাকে, যার আগে লেনদেনের নির্দেশ দিতে হয়। যদি আপনার লেনদেন কোনো ব্যাচের কাট-অফ টাইমের পরে হয়, তাহলে সেটি পরবর্তী ব্যাচে প্রসেস হবে।
সাধারণত একই দিনে টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়, তবে দিনের শেষের দিকে করা লেনদেন পরবর্তী কার্যদিবসে প্রসেস হতে পারে। এজন্য যদি আপনার দ্রুত টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে দিনের শুরুতে লেনদেন করা ভালো।
BEFTN কখন ব্যবহার করবেন?
BEFTN সিস্টেম বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের জন্য উপযুক্ত। যদি আপনার পাঁচ লাখ টাকা বা তার কম পরিমাণের টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয় এবং তাৎক্ষণিকতা খুব জরুরি না হয়, তাহলে BEFTN সবচেয়ে ভালো অপশন। এটি খরচ-কার্যকর এবং সহজলভ্য।
নিয়মিত বিল পরিশোধের জন্য BEFTN অত্যন্ত সুবিধাজনক। আপনার বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট বিল বা মোবাইল বিল পরিশোধ করতে BEFTN ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের বিল, লোনের কিস্তি, বা বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্যও BEFTN একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধ, চিকিৎসা খরচ পাঠানো, বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা পাঠানোর জন্যও BEFTN ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অনেক মানুষ প্রবাসে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য BEFTN-এর মাধ্যমে টাকা পাঠায়। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কর্মচারীদের বেতন বিতরণ, ছোট সাপ্লায়ার পেমেন্ট, বা নিয়মিত ব্যবসায়িক খরচের জন্য BEFTN একটি আদর্শ মাধ্যম।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও BEFTN ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। পেনশন বিতরণ, বিভিন্ন ভর্তুকি প্রদান, শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ, এবং অন্যান্য সরকারি পেমেন্টের জন্য BEFTN একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এর কারণ হলো BEFTN একসাথে হাজার হাজার লেনদেন দক্ষতার সাথে প্রসেস করতে পারে।
নীচে আপনার দেওয়া BEFTN উদাহরণের ঠিক একই টোন, স্টাইল ও লেখার ধরন বজায় রেখে NPSB সিস্টেমের অংশটি লিখে দিলাম। এটি সরাসরি আর্টিকেলে যুক্ত করতে পারবেন।
NPSB (National Payment Switch Bangladesh) কী?
সংজ্ঞা এবং পূর্ণরূপ
NPSB-এর পূর্ণরূপ হলো National Payment Switch Bangladesh, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘বাংলাদেশ জাতীয় পেমেন্ট সুইচ’। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি কেন্দ্রীয় পেমেন্ট অবকাঠামো, যার মাধ্যমে দেশের সমস্ত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কার্ড-ভিত্তিক সেবা এক প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয়। NPSB মূলত আন্তঃব্যাংক (inter-bank) কার্ড লেনদেনকে সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের ATM, POS এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমকে একটি একীভূত নেটওয়ার্কে আনতে এই সিস্টেমটি চালু করে। এর ফলে এক ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে অন্য ব্যাংকের ATM থেকে টাকা তোলা, POS-এ কেনাকাটা করা বা অনলাইন ট্রান্সাকশন করা সম্ভব হয়। বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই NPSB নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত, যার ফলে কার্ড-ভিত্তিক লেনদেন আরও নিরবিচ্ছিন্ন ও ঝামেলাহীন হয়েছে।
NPSB কীভাবে কাজ করে?
NPSB একটি কেন্দ্রীয় সুইচিং হাব হিসেবে কাজ করে। যখন কোনো গ্রাহক তার ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে অন্য কোনো ব্যাংকের ATM বা POS-এ লেনদেন করেন, তখন সেই লেনদেনের অনুরোধ প্রথমে NPSB-তে পাঠানো হয়। NPSB যাচাই করে কোন ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেই ব্যাংকে লেনদেন অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেয়। ইস্যুয়িং ব্যাংক ব্যালেন্স, কার্ডের স্ট্যাটাস এবং নিরাপত্তা যাচাই করে লেনদেন অনুমোদন করলে NPSB আবার সংশ্লিষ্ট ATM বা POS মেশিনে তথ্য পাঠিয়ে লেনদেনটি সম্পন্ন করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি মুহূর্তের মধ্যেই সম্পন্ন হয়, যার ফলে গ্রাহক রিয়েল-টাইমে লেনদেন সুবিধা পান।
NPSB-এর লেনদেন সীমা
NPSB-এর লেনদেন সীমা বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি নির্ধারণ করে না; বরং নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ব্যাংক নিজেদের নীতি অনুযায়ী সীমা নির্ধারণ করে। সাধারণভাবে দেখা যায়, একবারে ATM থেকে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা যায় এবং দৈনিক উত্তোলন সীমা ব্যাংকভেদে ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। POS-এ কেনাকাটা করার ক্ষেত্রেও সাধারণত ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন অনুমোদিত হয়। অনেক ব্যাংক NPSB-এর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তর (Interbank Fund Transfer) সুবিধা দেয়, যার সীমা সাধারণত ৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তাই লেনদেন সীমা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত নীতি জানা গুরুত্বপূর্ণ।
NPSB-এর কার্যকরী সময়
NPSB হলো একটি সম্পূর্ণ রিয়েল-টাইম সুইচিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের ৭ দিন এবং সারা বছর লেনদেন করা যায়। ব্যাংক ছুটির দিন, সরকারি ছুটি বা সপ্তাহান্ত—যে দিনই হোক না কেন, ATM, POS এবং অনলাইন পেমেন্ট NPSB-এর আওতায় সবসময়ই সক্রিয় থাকে। তাই গ্রাহক ব্যাংকিং সময়ের বাইরে থেকেও লেনদেন করতে পারেন।
NPSB কখন ব্যবহার করবেন?
NPSB ব্যবহার করা হয় মূলত কার্ড-ভিত্তিক আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে। যখন এক ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে অন্য ব্যাংকের ATM থেকে টাকা তুলতে হয়, বা একটি POS মেশিনে কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতে হয়, এবং সেই POS অন্য ব্যাংকের অধীনে থাকে—তখন NPSB লেনদেনটি সম্পন্ন করে। অনলাইন শপিং বা ই-কমার্স সাইটে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলেও NPSB লেনদেনটি রাউট করে। অনেক ব্যাংক তাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে NPSB-এর মাধ্যমে রিয়েল-টাইম interbank fund transfer সুবিধা প্রদান করে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে NPSB অপরিহার্য।
RTGS, NEFT এবং BEFTN-এর মধ্যে পার্থক্য
এই চারটি সিস্টেমের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা বুঝে নেওয়া জরুরি। প্রথমত, গতির দিক থেকে RTGS ও NPSB সবচেয়ে দ্রুত। এটি রিয়েল টাইমে কাজ করে এবং মাত্র কয়েক মিনিটেই টাকা স্থানান্তর হয়ে যায়। অন্যদিকে, BEFTN এবং NEFT ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম, যা নির্দিষ্ট সময় পরপর লেনদেন নিষ্পত্তি করে। এজন্য এই দুটি সিস্টেমে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
লেনদেন সীমার দিক থেকেও পার্থক্য রয়েছে। RTGS-এর জন্য সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা প্রয়োজন, কিন্তু সর্বোচ্চ কোনো সীমা নেই। এটি বড় অঙ্কের লেনদেনের জন্য ডিজাইন করা। NPSB এর লেনদেন সীমা সাধারণত ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে NPSB এর সর্বোনিম্ন সীমা সাধারণত ১০,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ লেনদেন সীমা সাধারণত ২,০০,০০০ টাকা। আপনার ব্যাংক থেকে তাদের লেনদেন সীমা জেনে নিন। BEFTN এবং NEFT-এ কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম সীমা নেই, কিন্তু সর্বোচ্চ সীমা রয়েছে। BEFTN-এ সাধারণত পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠানো যায়, যা ছোট ও মাঝারি লেনদেনের জন্য যথেষ্ট।
খরচের দিক থেকেও পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। RTGS-এর সার্ভিস চার্জ তুলনামূলকভাবে বেশি, কারণ এটি তাৎক্ষণিক এবং উচ্চ-মূল্যের লেনদেনের জন্য। NPSB এর সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট সহ ফি সাধারণত প্রতি লেনদেনে ১০ টাকা। BEFTN এবং NEFT-এর চার্জ সাধারণবত ফ্রি, যা ছোট লেনদেনের জন্য আরো উপযুক্ত করে তোলে। তবে সঠিক চার্জ আপনার ব্যাংক জেনে নিন।
কার্যকরী সময়ের দিক থেকেও পার্থক্য আছে। RTGS শুধুমাত্র ব্যাংকের কার্যকরী সময়ে চালু থাকে, সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। NPSB সাধারণত ২৪ ঘন্টা ও সপ্তাহে ৭ দিনই চালু থাকে। BEFTN সারা সপ্তাহ চালু থাকে, তবে শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ। NEFT কিছু দেশে ২৪/৭ পরিষেবা দেয়, তবে বাংলাদেশে এই সিস্টেম সরাসরি ব্যবহৃত হয় না।
লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
RTGS, NEFT বা BEFTN — যেকোনো ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেম ব্যবহার করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে জানা ও প্রদান করা আবশ্যক। নিচে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো:
১. প্রাপকের সম্পূর্ণ নাম:
যে ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠাতে চান, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যে নামটি নিবন্ধিত রয়েছে, ঠিক সেই নামটি দিতে হবে। ভুল নাম দিলে লেনদেন বাতিল হতে পারে।
২. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর:
সঠিক অ্যাকাউন্ট নম্বর ছাড়া লেনদেন সম্ভব নয়। একটি ডিজিট ভুল থাকলেও অর্থ অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যেতে পারে।
৩. ব্যাংকের নাম এবং শাখার নাম:
যে ব্যাংকে প্রাপক হিসাব রাখছেন, সেই ব্যাংকের সঠিক নাম ও শাখার নাম প্রয়োজন।
৪. রাউটিং নম্বর (Routing Number):
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে প্রাপকের ব্যাংকের শাখার ৯-সংখ্যার রাউটিং নম্বর প্রয়োজন হয়। BEFTN বা RTGS লেনদেনে এটি অত্যাবশ্যক। আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট শাখার রাউটিং নম্বর পেতে পারেন।
৫. লেনদেনের পরিমাণ:
RTGS-এর জন্য ন্যূনতম Tk. ১,০০,০০০ টাকা প্রয়োজন, যেখানে, NPSB, BEFTN বা NEFT পদ্ধতিতে ছোট অঙ্কের অর্থও পাঠানো যায়।
৬. ট্রান্সফার পদ্ধতি নির্বাচন:
অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ, বা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আপনি ট্রান্সফার করতে পারেন। ব্যাংকভেদে অনলাইন/ইলেকট্রনিক ফর্মে এই তথ্য প্রদান করতে হয়।
৭. লেনদেনের কারণ বা বিবরণ (Narration):
কেন আপনি অর্থ পাঠাচ্ছেন, যেমন “বেতন”, “পরিশোধ”, “ঋণ”, “পরিবারে পাঠানো”, ইত্যাদি উল্লেখ করলে তা ভবিষ্যতের রেকর্ডে সহায়ক হয়।
৮. আপনার পরিচয় নিশ্চিত করা:
অনলাইন বা অফলাইন লেনদেনে নিরাপত্তার জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রমাণীকরণ (যেমন: OTP, ডিজিটাল স্বাক্ষর, পিন, অথবা লিখিত স্বাক্ষর) দরকার হতে পারে।
উপসংহার
আজকের দিনে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানো আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক সহজ। কারণ আপনার হাতে এখন RTGS, BEFTN এবং NPSB — এই তিনটি নির্ভরযোগ্য ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার পদ্ধতি রয়েছে। প্রত্যেকটির কাজ আলাদা, সুবিধা আলাদা, আর ব্যবহারও আলাদা।
যদি বড় অঙ্কের টাকা খুব দ্রুত পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে RTGS সেরা। কয়েক মিনিটেই টাকা পৌঁছে যায়, তাই জরুরি ব্যবসায়িক পেমেন্ট বা উচ্চ-মূল্যের যেকোনো লেনদেনে এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।
আর যদি ছোট বা মাঝারি অঙ্কের টাকা পাঠাতে হয়, তবে সাধারণত BEFTN বা NPSB-ই যথেষ্ট। BEFTN একটু সময় নিয়ে ব্যাচ অনুযায়ী টাকা পৌঁছায়, কিন্তু খরচ কম ও নির্ভরযোগ্য। অন্যদিকে NPSB হলো দ্রুত এবং একই দিনের ব্যাংক-টু-ব্যাংক লেনদেনের একটি জনপ্রিয় সমাধান, যা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
সংক্ষেপে বললে:
- RTGS → উচ্চমূল্যের, জরুরি।
- BEFTN → নিয়মিত, বড় পরিমাণ কিন্তু জরুরি নয়।
- NPSB → দ্রুত, দৈনন্দিন ছোট/মাঝারি লেনদেন।
আপনার প্রয়োজন, টাকার পরিমাণ এবং কত দ্রুত টাকা পৌঁছানো দরকার—এসব বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতি বেছে নিলেই পুরো প্রক্রিয়া হবে আরও সহজ, নিরাপদ এবং ঝামেলাহীন।
শেষ কথা– লক্ষ্য পরিষ্কার থাকলে পদ্ধতি বেছে নেওয়াও সহজ। ব্যাংকিং এখন আপনার হাতের মুঠোয়; তাই সচেতন হয়ে সুবিধাগুলো ব্যবহার করুন।