ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সবচেয়ে কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হল চেক। আমরা নিজের প্রয়োজনে একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন অথবা কাউকে পেমেন্ট দেওয়ার জন্য চেক ব্যবহার করে থাকি। চেক ব্যবহার করতে হলে আমাদের অবশ্যই চেক লেখার নিয়ম সঠিকভাবে জানা থাকতে হবে। কেননা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র একটি সঠিকভাবে পূরণকৃত চেকের বিপরীতেই টাকা প্রদান করে।
চেক লেখা বিষয়ে আমাদের অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাছাড়া চেক অনেক প্রকার হওয়ার জন্য অনেকে বুঝতে পারে না কোন চেক কিভাবে লিখতে হয়। এই লেখায় আমরা সব ধরণের চেক এবং সেগুলো লেখার সঠিক নিয়ম বর্ণনা করব। আশা করি লেখাটি আপনার উপকারে আসবে।
সঠিকভাবে চেক লেখার নিয়ম
বাংলাদেশের সবগুলো ব্যাংক চেকবই ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনের জন্য একই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এই তথ্যগুলো আপনাকে সাবধানে পূরণ করতে হবে। নীচে চেক লেখার নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করছি।
- DATE: চেকের ডান পাশের উপরের কোনায় তারিখ (Date) লেখার জায়গাটা বক্স আকারে দেওয়া থাকে। তার মধ্যে প্রথম দুইটা বক্সে তারিখ, পরের দুইটা বক্সে মাস এবং শেষের চারটা বক্সের মধ্যে সাল উল্লেখ করুন।
- Pay to: নিজের প্রয়োজনে টাকা উত্তোলনের জন্য বা নিজেই ব্যাংকে গিয়ে টাকা উঠাতে চেকের বাম পাশে যে লাইনটি Pay to লেখা দিয়ে শুরু তারপরে ‘Self‘ বা ‘নিজ’ লিখুন। যদি অন্য কাউকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করেন তাহলে এই জায়গায় তার নাম লিখুন।
- The Sum of Taka: তার ঠিক নিচের লাইনটিতে যত টাকা উঠাতে চান তার পরিমাণ (The Sum of Taka) কথায় (বানান করে) লিখুন এবং শেষে “মাত্র” শব্দটি যোগ করুন।
- Tk.:বক্স করে দেওয়া জায়গাটির মধ্যে প্রদেয় টাকার পরিমান অংকে লিখতে হবে। এখানে একটি জিনিস উল্লেখ করা দরকার যে টাকার পরিমাণ অংকে লেখার পর অবশ্যই এই চিহ্নটি (/=) ব্যবহার করবেন। এতে করে উল্লেখিত নাম্বার এর পরে আর কোন সংখ্যা বসানোর সুযোগ থাকে না।
- Please Sign Above This Line: সবশেষে চেকের নিচের অংশের ডান পাশে (Please Sign Above This Line) Signature লেখার উপরে একটি লাইন দেওয়া থাকে। এই লাইনটির উপরে আপনি আপনার স্বাক্ষর প্রদান করুন।
- চেকের বামপাশের অংশটি (Counter part) বইয়ের সাথে যুক্ত থাকে সেটাও যথাযথভাবে পূরণ করুন এবং সংরক্ষণ করুন। এটা আপনার একাউন্ট ব্যালেন্স বলে দেবে এবং উক্ত চেকটি কাকে কী উদ্দেশ্যে দিয়েছেন সে সম্পর্কে তথ্য বহন করে। (এটি আপনার প্রয়োজনে কাজে আসবে। এই অংশটি পূরণ না করলেও চলবে।)
বিঃদ্রঃ কোন স্থানে কাটাছেঁড়া করলে বা ভুল হলে পুনরায় সংশোধন করুন এবং ভুল হওয়া লেখার পাশে আপনার স্বাক্ষর দিয়ে দিন। এতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে এই ভুলটি আপনি নিজে করেছেন। যেমনঃ টাকার পরমাণ লিখতে ভুল করা। এর সুবিধা হলো অন্য কাউকে চেক দিলে সে টাকার অংক পরিবর্তন করে বেশি টাকা উঠাতে পারবেনা, কারণ আপনার স্বাক্ষর না থাকলে ব্যাংক তাকে টাকা দিবেনা।
চেকের পিছনের অংশ পূরণের নিয়মঃ
- Endores Here: পিছনের পাত্র বামপাশে Endored Herer নামে একট লেখা পাবেন। তার নিচে দুইটি লাইন দেখতে পাবেন। এখানে আপনার নামটি ২ বার লিখে দিন। তার নিচে আপনার মোবাইল নম্বরটি লিখে দিন।
এরপর চেকটি নির্দিষ্ট তারিখে (চেকে লেখা তারিখে) ব্যাংকের কাউন্টারে গিয়ে জমা দিলে আপনাকে চেকে লেখা পরিমাণ টাকা পরিশোধ করা হবে। কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
নিজের নামে চেক লেখার নিয়ম
অনেক সময় আমরা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর জন্য চেক ব্যবহার করি। এই ধরণের চেক লেখা একটি সাধারণ এবং সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া। নীচে আমি নিজের নামে চেক লেখার নিয়ম বর্ণনা করছি।
- চেকের নির্ধারিত তারিখ এর ঘরে সঠিকভাবে তারিখ লিখুন।
- Pay to এর জায়গায় আপনার নিজের নাম বা শুধুমাত্র “নিজ” কথাটি লিখুন এবং বাকি খালি জায়গাটি একটি দাগ টেনে কেটে দিন।
- পরিস্কার হস্তাক্ষরে টাকার পরিমাণ The sum of taka এর অংশে কথায় লিখুন এবং এখানেও বাকি খালি জায়গা দাগ টেনে কেটে দিন। কথায় টাকার পরিমন লেখার পরে অবশ্যই মাত্র কথাটি লিখতে ভুলবেন না।
- টাকার অংকের নির্ধারিত বক্সে টাকার অংক লিখুন এবং এর সামনে ও পেছনে (/=) চিহ্ন ব্যবহার করুন।
- Signature অংশে আপনার স্বাক্ষর করুন।
এখন আপনার নিজের নামে লেখা চেকটি ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম
বাংলাদেশের প্রায় সকল ব্যাংকগুলোর চেক লেখার নিয়ম প্রায় একই। অর্থাৎ সোনালী ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম বা ইসলামী ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম এর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের চেক লেখার নিয়মও যা জানতা ব্যাংক এর চেক লেখার নিয়মও তাই। সবগুলো ব্যাংকের চেকেই সাধারণত প্রায় একই তথ্য সরবরাহ করতে হয়। আপনি একটি ব্যাংকের চেক লিখতে পারলে সব ব্যাংকের চেক লিখতে পারবেন।
ইংরেজিতে চেক লেখার নিয়ম
ইংরেজিতে চেক লেখার জন্য আপনাকে আলাদা কোন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে না। বাংলাতে যেভাবে চেক লেখার নিয়ম বর্ণনা করেছি ইংরেজিতে ঠিক একই তথ্যগুলো আপনি চেকে লিখুন। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, আপনি যদি ইংরেজিতে চেক লেখেন তাহলে চেকের সম্পূর্ণ তথ্য ইংরেজিতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলা এবং ইংরেজি মিলিয়ে ফেলবেন না, যা একটি সাধারণ ভুল অনেকেই করে থাকে।
চেক বই তোলার নিয়ম
আপনার চেক বই এর পৃষ্ঠাগুলো শেষ হয়ে গেলে আপনাকে আবার নতুন চেক বই পাওয়ার জন্য একটি আবেদন করতে হয়। সাধারণত চেক বইগুলোতে একটি অতিরিক্ত পৃষ্ঠা থাকে যেটিকে চেক রিকুইজিশন স্লিপ বলে। এটি সঠিকভাবে পূরণ এবং স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা দিলে আপনি আবারো একটি নতুন চেক বই পেয়ে যাবেন।
এই চেক রিকুইজিশন স্লিপে আপনাকে যে তথ্য গুলো উপস্থাপন করতে হবে তা হল:
- ব্যাংকের ব্র্যাঞ্চ এর নাম।
- আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার।
- অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম।
- তারিখ।
- ফোন নাম্বার।
- আপনার স্বাক্ষর।
এই তথ্যগুলোর পাশাপাশি আপনি কত পৃষ্ঠার চেক বই নিতে চাচ্ছেন তা নির্ধারিত করে দিতে হতে পারে। ব্যাংক ভেদে আপনাকে আরো কিছু তথ্য সরবরাহ করতে হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে অনলাইনে অনেক ব্যাংকের চেকের জন্য আবেদন করা যায়। যা অনেক বেশি সহজ এবং সময় বাঁচাতে পারে।
চেক লিখতে ভুল হলে করণীয়
সতর্কতা সত্তেও অনেক সময় আমরা চেক লেখার সময় ভুল করে ফেলি যা খুব হতাশাজনক এবং বিব্রতকর। কিছু ক্ষেত্রে আপনি এগুলো সংশোধন করতে পারবেন। যেমন যদি আপনি তারিখ বা নামের কোন অক্ষর লিখতে ভুল করেন তাহলে সেই জায়গাটি ঘসাঘসি করবেন না বা বেশি বেশি কাটাকাটি করবেন না। শুধুমাত্র পরিস্কারভাবে জায়গাটি একটি ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিন। এরপর ভুল জায়গাটির উপরে নতুনভাবে সঠিক বিষয়টি পরিস্কার করে লিখুন। লেখার পাশে আপনার স্বাক্ষর করুন।
তবে যদি এমন হয় আপনি টাকার অংশ কথায় যা লিখেছেন অংকে লেখা অংশের সাথে তা মিলছে না বা দুইটি জায়গায় ভিন্ন পরিমাণ লিখেছেন, তহলে সেটি সংশোধন করা কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তোবা আপনাকে চেকটি বাতিল করতে হতে পারে।
স্বাক্ষর করা চেক হারিয়ে গেলে কী করবেন
চেক হারিয়ে যাওয়া খুব বিব্রতকর একটি পরিস্থিতি এবং অনেকের সাথেই এমনটি হয়ে থাকে। আপনার স্বাক্ষর করা চেকের পাতাটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে সেটিকে লঘুভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই, বরং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে আপনাকে যা করতে হবে তা হল ওই নির্দিষ্ট চেকের পেমেন্ট স্টপ করে রাখা। পেমেন্ট স্টপ করার জন্য আপনি আপনার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। অনেক ব্যাংক অবশ্য এর জন্য নির্ধারিত ফি নিয়ে থাকে।
যদি আপনার পক্ষে ব্যাংকে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যাংকের কল সেন্টারে যোগাযোগের মাধ্যমেও আপনি ওই নির্দিষ্ট চেকের পেমেন্ট স্টপ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সিকিউরিটি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে। চেকটি যদি কোন স্পর্শকাতর লেনদেনের হয়ে থাকে তাহলে ব্যাংকে জানানোর পাশাপাশি আপনাকে থানায় একটি জিডি করতে হবে।
চেক হারিয়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে বরং উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন। এই সামান্য পদক্ষেপই আপনার ব্যাংকে জমানো টাকাকে নিরাপদ করবে। তবে এটিকে অবহেলা করা যাবেনা।
কীভাবে একটি চেক বাতিল করবেন?
একটি চেক বাতিল করা মোটেও কঠিন কোন কাজ নয়, বরং অত্যন্ত সোজা। আপনি সম্পূর্ণ চেক জুড়ে একটি ক্রস চিহ্ন আঁকতে পারেন এবং লিখে দিতে পারেন ‘বাতিল’। অথবা চেকের মাঝখানে দুইটি সমান্তরাল লেখা টানতে পারেন, যার মাঝখানে বাতিল বা CANCELED লিখে দিবেন। এর মাধ্যমে আপনার ওই চেকটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়ে যাবে এবং কেউ আর কখনও সেটি ব্যবহার করতে পারবে না।
চেকের প্রকারভেদ
টাকা আদান-প্রদানের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকার চেক ব্যবহার করে। আসুন জেনে নিই বিভিন্ন প্রকার চেক এবং সেগুলো লেখার নিয়ম।
১। ক্রস চেক (Crossed Cheque)
ক্রস চেক হলো একটি সাধারণ চেক, যার মধ্য দিয়ে উপর থেকে নিচের দিকে দুটি সমান্তরাল রেখা একে দেওয়া হয় অথবা বাম পাশের উপরের কোনার দিকে দুটি সমান্তরাল রেখা দিয়ে মার্ক করা থাকে। ক্রস চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করা যায় না। এটা দ্বারা শুধুমাত্র এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা যায়।
ক্রস চেক অন্যসব সাধারণ চেকের মতো লিখতে হয়। এখানে পার্থক্যটা শুধু চেকের বামপাশের উপরের কর্নারে দুইটা প্যারালাল লাইন দিয়ে মার্ক করতে হয়। এ দুটি প্যারালাল লাইন এর মধ্যে A/c payee বা not negotiable লেখা হয়।
২। বেয়ারার চেক (Bearer Cheque)
বেয়ারার চেক বা বাহক চেক ব্যাংকে উপস্থাপনকারীকে ব্যাংক সাধারণত টাকা প্রদান করে থাকে। এ ধরনের চেকের ওপর কারো নাম না লিখে উক্ত স্থানে নগদ বা ক্যাশ লিখে চিহ্নিত করা হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে চেকটি যার কাছে থাকবে সেই ব্যক্তিই শুধুমাত্র নগদ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।
একটি বাহক চেক লেখার নিয়ম একটি সাধারণ চেক লেখার মতোই। এতে বাড়তি কোন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করতে হয় না।
৩। একাউন্ট পে চেক (Account Pay Cheque)
একাউন্ট পে চেক আর ক্রস চেকের মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। ক্রস চেকের দুইটি ভার্টিক্যাল লাইন এর মধ্যে A/C Payee লিখে দিলে এটিকে একাউন্ট পে চেক বলে। একাউন্ট পে চেক আর ক্রস চেক মূলত একই রকম।
একাউন্ট পে চেক লেখার নিয়ম বা এই চেকগুলো লিখতে গেলে কোন বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। আপনাকে শুধু টাকা গ্রহীতার নামের জায়গায় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নামটি সঠিক ভাবে লিখতে হবে।
৪। আদেশ চেক (Order Cheque)
যখন আপনি নির্দিষ্ট কাউকে অথবা তার আদেশানুসারে অন্য কাউকে টাকা প্রদানের জন্য আপনার ব্যাংকে আদেশ দিবেন তখন সেটিকে আদেশ চেক বলা হয়। এই চেকগুলোর মালিকানা পরিবর্তন করা যায়। আদেশ চেকের প্রাপক ইচ্ছা করলে সেটিকে এন্ডোর্সমেন্ট এর মাধ্যমে হস্তান্তরযোগ্য করতে পারেন।
এই চেকগুলোতে অর্থ গ্রহীতার নামের পরে ‘বা আদেশে’ কথাটি উল্লেখ করতে হবে।
৫। ভ্রমণকারীর চেক (Traveller’s Cheque)
বিদেশ ভ্রমন করার জন্য অনেকে এই ধরণের চেক ব্যবহার করে। এই চেকগুলো ব্যবহার করে আপনি ব্যাংক বা বিশেষ এক্সচেঞ্জ অফিসগুলি থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তাছাড়া এগুলো ব্যবহার করে রেলওয়ে বা এয়ারলাইনের টিকেট, দোকান, হোটেল বা রেস্তরার বিল পরিশোধ করতে পারবেন। ভ্রমণকারীদের চেকগুলো সাধারণত ব্যাংক ইসু করে থাকে, এক্ষেত্রে বিখ্যাত ইস্যুকারীদের মধ্যে আমেরিকান এক্সপ্রেস (American Express) সেরা।
এই চেকগুলো থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য আপনাকে চেকের উপরে পূর্বে করা স্বাক্ষর অনুযায়ী নীচে আরো একবার স্বাক্ষর করতে হবে। উভয় স্বাক্ষর অভিন্ন হলে চেকের সত্যতা প্রমাণিত হবে।
উপরোক্ত চেকগুলো ছাড়াও আরো কিছু প্রকার চেক আছে। যেমন উপহার চেক, মার্কেট চেক, বিবিধ চেক ইত্যাদি। তবে এই ধরনের চেকের ব্যবহার যথেষ্ট কম।
কাগজের চেক এখনো দরকারী কেন?
কখনও কখনও পেমেন্টের জন্য বাকি সব উপায়ের পরিবর্তে কাগজের চেক ব্যবহার করা বেশি সুবিধাজনক বা আপনার একমাত্র পছন্দ হয়ে উঠতে পারে। নিম্নে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
- ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করার জন্য দোকানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় আপনার পকেটের দু’চারটে ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড থাকলেও তার ব্যবহার করতে পারবেন না। তখন চেক এবং নগদই হতে পারে একমাত্র উপায়।
- কিছু দোকানপাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত চার্জ করে থাকে কিন্তু চেকের জন্য নয়।
- বিদ্যুৎ বিভ্রাট অব্যাহত থাকলে এটিএম বুথ থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্যাশ টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রেও আপনার পরিবারের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য কাগজের চেক হতে পারে সর্বোত্তম পন্থা।
- বর্তমান সময়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পেমেন্টের মাধ্যম হিসেবে ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু এই আধুনিক সেবা গ্রহণের জন্য আপনাকে গুনতে হবে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে থাকা সার্ভিস চার্জগুলো। অন্যদিকে চেক ব্যবহারের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার চার্জ দিতে হয় না।
চেক লেখার পূর্বে যে জিনিসগুলো মাথায় রাখা দরকার।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমরা প্রায়ই চেক লিখে থাকি। আর এই চেক লেখার সময় ভুল-ভ্রান্তি হলে বিভিন্ন রকমের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তাই ভুলভ্রান্তি মুক্ত একটি চেক লেখার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার।
- চেক লেখার পূর্বে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনার হাতের লেখা সহজে পড়ার যোগ্য।
- যে এমাউন্টটি আপনি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে চান সেটা বানান করে কথায় লিখতে পারেন কিনা।
- লেখার সময় কালো কালির কলম ব্যবহার করাই উত্তম, তবে নীল কালির কলম ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- লাল কালির কলম কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।
- লেখার সময় ওভাররাইটিং করা যাবে না। করলে তা সংশোধন করে স্বাক্ষর করতে হবে।
- অক্ষম হলে অন্য বিশ্বস্ত কারও সহায়তা নিতে পারেন।
- চেক লেখার সময় বাংলা অথবা ইংরেজি, যে কোন একটি ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। তবে বাংলা এবং ইংরেজি মিশ্র করে লিখবেন না।
পরিসমাপ্তি
বর্তমান সময়ে অনলাইনে টাকা লেনদেন প্রক্রিয়া যেমন সুবিধা বাড়িয়েছে, তেমনি বেশ কিছু অসুবিধাও সৃষ্টি করেছে। প্রতারক বা হ্যাকারের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অনেকে অনলাইন পেমেন্টকে এড়িয়ে চলতে চায়। যে কারণে অনেকে চেক একটি নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত লেনদেন প্রক্রিয়া বলেই মনে করে।
তবে চেক ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সঠিকভাবে চেক লেখার নিয়ম জানতে হবে। তা না হলে আপনি অনাকাঙ্খিত ভোগান্তির স্বীকার হতে পারেন। ভুলভাবে চেক লেখা ভোগান্তির পাশাপাশি আপনার সর্বশান্ত হওয়ার কারণও হতে পারে। সঠিকভাবে চেক লিখুন, নিরাপদ থাকুন। ধন্যবাদ।