কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যে কোন ব্যবসায়ীর জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার প্রয়োজনে যে কাউকেই লোন নিতে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি একজন নতুন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে লোন দিবে কে? উত্তর হলো- কর্মসংস্থান ব্যাংক।
আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে ২০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত বিহীন লোন নিতে পারবেন। তাছাড়া আপনার প্রস্তাবিত প্রকল্প বিচারে এই ব্যাংক অনেক বেশি টাকা সহজ শর্তে লোন দিয়ে থাকে।
তাই আপনিও যদি একজন উদ্যোক্তা হতে চান তবে এই প্রবন্ধটি হবে আপনার জন্য সহায়ক হবে। বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি; জানুন প্রয়োজনীয় সব তথ্য
কর্মসংস্থান ব্যাংক বিশেষত বেকারদের স্বাবলম্বী করার জন্য সবচেয়ে কম সুদে ও বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা প্রদান করে। একজন বাংলাদেশী নাগরিক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করার জন্য এই ব্যাংক থেকে লোন পেতে পারেন। যেসব খাতে আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন পেতে পারেন তা নিচে আলোচনা করা হলো।
১. মৎস চাষ
বিভিন্ন ধরণের মাছের চাষ এখনকার সময়ের অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। রেণু পোনা, তেলাপিয়া, চিংড়ি, পাংগাস, কার্প জাতীয় মাছ, বা মিশ্র মৎস চাষ করতে আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নিতে পারবেন।
২. গবাদীপশু ও হাঁস-মুরগী পালন
আপনি যদি গরু মোটাতাজাকরণ করতে চান, বা দুগ্ধ খামার, ছাগল, ভেড়া পালন করতে চান, এই ব্যাংক আপনাকে লোন দিবে। এমনকি এখান থেকে লোন নিয়ে আপনি ব্রয়লার মুরগীর খামার, লেয়ার মুরগীর খামার অথবা কোয়েল পালনের মতো প্রজেক্ট শুরু করতে পারবেন।
৩. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
দেশের বেকারত্ব দূর করতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাঁশ ও বেত শিল্প, প্রিন্টিং এবং সাইনবোর্ড তৈরি, যন্ত্রাংশ বা যন্ত্রপাতি তৈরি সহ বিভিন্ন ধরণের কুটির শিল্পের জন্য আপনি এখান থেকে লোন পেতে পারেন।
৪. পরিবহন সেবা
আপনি যদি পণ্য/যাত্রী পরিবহন করার জন্য অথবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত/শিক্ষানবিশ ড্রাইভার হিসাবে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে চান তাহলে কর্মসংস্থান ব্যাংক আপনাকে লোন দিবে। পরিবহন সেবার মান উন্নয়ন এবং বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে কর্মসংস্থান ব্যাংক সফলভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
৫. শিল্প-কারখানা
আপনি যদি কোন শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে চান, কর্মসংস্থান ব্যাংক আপনার পাশে থাকবে। কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি, প্রাণী খাদ্য তৈরির কারখানা, রাইস মিল, বেকারী শিল্প সহ আরো অনেক ধরণের শিল্প-কারখানা স্থাপনে আপনি ঋণ সুবিধা পাবেন।
৬. ব্যবসা খাত
বিভিন্ন ব্যবসা খাত যেমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, তৈরি পোষাক ব্যবসা, কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, বা ঔষধের ব্যবসার মতো খাতেও এই ব্যাংক থেকে লোন সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি এমন কোন ব্যবসা শুরু করার আগে লোনের প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক এর সাথে আলাপ করতে পারেন।
৭. সেবা খাত
কম্পিউটার সেবা, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক, আবাসিক হোটেল, বা বিউটি পার্লারের মতো সেবামূলক কোন খাতে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন? এগুলো ছাড়াও ক্যাবল অপারেটর সার্ভিস, গাড়ি মেরামত ওয়ার্কশপ, জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুত বিতরণ এর মতো সেবামূলক খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে কর্মসংস্থান ব্যাংক আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
৮. উৎপাদনশীল প্রকল্প
মৌচাষ করে সফল হওয়ার মতো গল্প এখন আর অতটা অবাক করার মতো কিছু নয়। এমন আরো অনেক উৎপাদনশীল প্রকল্প যেমন মাশরুম চাষ, রেশন চাষ, নার্সারী এর মতো খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে কর্মসংস্থান ব্যাংকে যোগাযোগ করতে পারেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে আপনার পার্শ্ববর্তী কর্মসংস্থান ব্যাংক এর কোন শাখায় যোগাযোগ করুন। সেখানে আপনার প্রকল্প বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সথে আলাপ করুন এবং লোনের জন্য আবেদন করুন।
আপনার প্রকল্প যদি ব্যাংক অনুমোদিত হয় এবং আপনি যদি সকল কাগজপত্র সহ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করতে পারেন তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার লোন পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
আরো পড়ুনঃ যেকোন ব্যাংক থেকে খুব সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন ফরম
লোন পাওয়ার প্রথম ধাপ হল ব্যাংক এর নির্ধারিত লোন আবেদন ফরম পূরণ এর মাধ্যমে লোন আবেদন করা। আপনি ব্যাংক এর শাখায় গিয়ে ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। তবে এখন অনলাইনেও এই ফরমটি পূরণের সূযোগ আছে।
এই লোন ফরমে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য দিতে হবে। যে প্রজেক্টের জন্য আপনি লোন আবেদন করছেন সেটি উল্লেখ করতে হবে। আপনার নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর এবং ফোন নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোনের জন্য কোন জামানত প্রয়োজন হবে না, কিন্তু লোন আবেদন তার চেয়ে বেশি হলে জামানত প্রদান করতে হবে।
আবেদনকারীর বাবার নাম, মায়ের নাম এবং স্পন্সর এর নাম উল্লেখ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট অনুযায়ী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। আপনার গ্যারান্টারের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ফরমে থাকতে হবে। উদ্যোক্তার জন্ম তারিখ পূরণ করতে হবে এবং প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরন দিতে হবে।
উপরোক্ত সকল তথ্য ফরমের নির্ধারিত অংশে সরবরাহ করার পরে আবেদনপত্রটি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে http://kbolas.karmasangsthanbank.gov.bd/Loan-Application-Form লিংকের মাধ্যমে অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কত টাকা লোন নেওয়া যাবে?
সাধারণত ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়ার জন্য আপনার কোন জামানত প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক আপনাকে ৮% সরল সুদে এই লোন প্রদান করবে। আপনার লোন ৫ লক্ষ টাকার উপরে হলে আপনাকে জামানত প্রদান করতে হবে। আপনি আপনার প্রকল্প অনুযায়ী এই ব্যাংক থেকে অনেক বেশি টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নেওয়ার যোগ্যতা
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো পূরণ করলে আপনি লোন পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচত হবেন। এগুলো নিম্নরূপ:
- আপনি বাংলাদেশের নাগরিক;
- আপনি বেকার অথবা অর্ধবেকার;
- আপনার বয়স ১৮ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। তবে যদি পূর্বেও এই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকেন তাহলে বয়স সীমা শিথিলযোগ্য হবে;
- আপনি যে প্রকল্পের জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন সেটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে;
- কোন ব্যাংক, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপী নন;
- ব্যাংক এর যে শাখা থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন তার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে অথবা অধিক্ষেত্রের কাউকে গ্যারান্টার হতে হবে;
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে;
- আর্থিক আচরণের ক্ষেত্রে সুনাম থাকতে হবে এবং ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকতে হবে;
- ঋণ নীতিমালার সব নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
টাকার অংক এবং প্রকল্প এর খাত অনুযায়ী কাগজপত্রের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে এই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য সচরাচর আপনাকে যে ডকুমেন্টগুলো সরবরাহ করতে হবে তার তালিকা আমি নীচে উল্লেখ করছি।
- লোন আবেদনের পূরণকৃত ফরম;
- আপনার সদ্যতোলা দুইকপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো (সত্যায়িত);
- গ্যারান্টারের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ফটো;
- ইউপি চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ;
- ব্যাংক শাখা অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণের জন্য উদ্যোক্তা বা গ্যারান্টারের দলিলের ফটোকপি;
- লোনের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকার উপরে হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি দিতে হবে;
- প্রকল্পের খাত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এর ফটোকপি।
সমাপ্তি
দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান করার জন্য সরকারের এই ধরণের পদক্ষেপ অবশ্যই প্রসংশার দাবী রাখে। এই ব্যাংকের ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় সহ ২৪টি শাখা রয়েছে, যেখান থেকে হাজারো বেকার জনগণকে স্বনির্ভর করতে লোন প্রদান করে। আশা করি কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছি।
আমি একজন স্টুডেন্ট পরাশুনার পাশাপাসি বিসনেস করতে চাই তাই আমার ১লাখ টাকা লোন লাগবে তার জনবো কি কি করতে হবে
আমাদের পোস্টটি ফলো করুন। আরো বিস্তারিত জানতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের যেকোন শাখায় যোগাযোগ করুন।
আমি দশলাখ টাকার লোন নিতে চাচিছ বাড়ির দলিল রেখে
ব্যাংকে যোগাযোগ করুন
আমি একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কন্টাকে কাজ করি আমি দশ লাখটাকা লোন চাচ্ছি আমার বাড়ির দলিল রেখে আমিকিলোনপাভ
ব্যাংকে যোগাযোগ করুন